- ফের বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কবলে সাংবাদিক! - April 2, 2023
- আদর্শকে স্টল না দিয়ে প্রেস রিলিজ মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অবস্থানের দলিল - January 22, 2023
- বাচ্চারা কি গিনিপিগ নাকি? - January 19, 2023
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কোন ভুভুক্ষ রাক্ষস দল আছে যাদের পালতে রাষ্ট্রের প্রায় পৌনে এক হাজার কোটি বেশি লাগছে?
বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের ২০০৫-৬ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুন্নয়ন বাজেট ছিল ৫৭ কোটি টাকা আর উন্নয়ন বাজেট ছিল ৩৪৫ কোটি টাকা। মোট বাজেট ছিল ৪০২ কোটি টাকা, দৈনিক হিসেবে খরচ ছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। যদিও ২০০৫-৬ এ সেই সরকারের শেষদিককার অর্থবছর বিধায় বরাদ্দ বেশি ছিল, কিন্তু এর ঠিক আগের বছরে মোট বরাদ্দ ছিল মাত্র ২৭৩ কোটি। (তথাপি এপল টু এপল তুলনার স্বার্থে আমরা বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের শেষ অর্থবছরের বরাদ্দই আমলে নিচ্ছি)।
অন্যদিকে আজই বিদায় হতে যাওয়া অর্থবছরে পিএম অফিসের মোট খরচ ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রথমিক বরাদ্দের পরিমাণ ৩ হাজার ৮৩৯, দৈনিক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দৈনিক খরচ ১০ কোটি ৫১ লাখ! বিগত বছর গুলার ধারাবাহিকতায় এটা বলা যায় যে, সংশোধিত বাজেটে এই খরচ বেড়ে ৪ হাজার কোটি ছাড়াবে!
অর্থাৎ ১২+২ বা ১৪ বছর পরে এসে খালেদা জিয়ার অফিসের চেয়ে শেখ হাসিনার অফিসের ব্যয় বেড়েছে সাড়ে নয় থেকে ১০ গুণ। এই সময়ে বাজেটের আকার বেড়েছে সাড়ে সাত গুণ। জাতীয় বাজেটের আকার বৃদ্ধির চেয়ে পিএম অফিসের বাজেট বৃদ্ধির এই যে দুই থেকে আড়াই গুণের বেশি ব্যবধান, এর পরিমাণ প্রায় ৬৫০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকা।
তবে এখানে কথা আছে, সরকারের ব্যয়ের দিক থেকে বাজেটের আকার সাড়ে ৭ কিংবা ৮ গুণ বাড়লেও আয়ের দিক থেকে বাজেট বেড়েছে সাড়ে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬ গুণ। সদ্য বিদায়ী বাজেট সাইজে অতিকায় হলেও এর বাজেট ঘাটতি প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার কাছাকাছি বা বেশি। সাড়ে তিন লক্ষের বেশি রাজস্ব টার্গেট থাকলেও তা ২ লক্ষ অতিক্রম করতে পারেনি। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের রাজস্ব আয়ের গ্রোথের (বছরভেদে ৫ থেকে ৭%, গড়ে আনুমানিক ৬%) চেয়েও অস্বাভাবিক হারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেট বাড়তে পারে কি? প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের খরচ কি জাতীয় অর্থনীতির ধারাবাহিকতার বাইরে বিচ্ছিন্ন কিছু?
এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রাথমিক বরাদ্দ থেকেও বছর শেষের সম্পূরক বাজেটে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাজেট বাড়িয়ে দেয়ার মধ্যে অতিমাত্রার অস্বাভাবিকতা দেখা গেছে। ২০১৭-১৮ তে প্রাথমিক বরাদ্দ ১৪৫৬ কোটি ছিল। যা পরে বাড়িয়ে ৩ হাজার ২৭৭ কোটি করা হয়। ২০১৯-২০ এ প্রাথমিক বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা, তবে সংশোধিত বরাদ্দ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা।
বর্তমানে পিএম কার্যালয়ে এটুয়াই সহ নতুন কয়েকটা প্রজেক্ট করছে তবে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট খরচ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাজেটের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রত্যেক প্রজেক্টের খরচ প্রজেক্টের বাজেট/একনেক বরাদ্দ থেকেই করা হয়। প্রকল্পসমূহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের উন্নয়ন বাজেট থেকেই বরাদ্দ পায়, যা পুরো বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অংশ। তথাপি ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বাজেট সাড়ে নয় বা দশ গুণের বেশি বাড়তে পারে কি? এই প্রশ্নের জবাব কে দিবে?
গতানুগতিক কাজ যদি ডিজিটালি করা হয়, রিমোটলি করা হয়, কনফারেন্সের মাধ্যমে রিমোটলি বাটন টিপে বহু প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর এবং বহু উন্নয়ন কাজের উদ্ভোদন হয়, তাহলে তো পিএম অফিসের খরচ কমে আসার কথা! তাই নয় কি? যদি না আসে, তাইলে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সুফল নাগরিক ঠিক কিভাবে পাচ্ছে? আমরা তো ব্যাংক চুরি, পর্দা কেনা, বালিশ তোলা, লাখ টাকায় গাছের চারা, কোটি টাকায় ফ্রিজ কেনা থেকে শুরু করে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল কিংবা আজকের মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট কেনার ভূতুড়ে খরচ পর্যন্ত কোথাও ডিজিটাল ম্যানেজমেন্টের সুফল কিংবা খরচের স্বচ্ছতা দেখতে পারছি না। দুর্নীতি থামানো, খরচের স্বচ্চতা, দক্ষতা ইত্যাদি তো ডিজিটাল সিস্টেমের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হবার কথা ছিল! তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে কোন ভুভুক্ষ রাক্ষস দল আছে যাদের পালতে রাষ্ট্রের প্রায় হাজার কোটি বেশি লাগছে? উপরন্তু করোনা কালে যেখানে বহু প্রকল্প বন্ধ, বহু প্রকল্পে ধীর গতি চলছে, জ্বলানি ও ট্রান্সপোর্টেশান ব্যয় সহ বহু গতানুগতিক কাজে ব্যাপক সাশ্রয় হবার কথা, যেখানে প্রায় সব কাজ রিমোটলি হচ্ছে, সেখানে খরচ উল্টো বাড়বেই বা কেন? কোন ভুভুক্ষ রাক্ষসে রাজস্ব আয়ের স্বল্পতায় ভোগা রাষ্ট্রের প্রায় পৌনে এক হাজার কোটি খেয়ে ফেলছে?

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ একজন টেকসই উন্নয়ন গবেষক
10,582 total views, 2 views today